সৌরভ হাসান হাসিব:
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের মূল আকর্ষণ দ্রুত রান তোলা, চার-ছক্কার বন্যা এবং প্রতিপক্ষকে মুহূর্তেই ম্যাচের বাইরে ঠেলে দেওয়া। আমরা যখন মারকাটারি ব্যাটসম্যানদের কথা ভাবি, তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশ্ববিখ্যাত তারকাদের নাম—ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, সূর্যকুমার যাদব, জস বাটলার কিংবা ট্রাভিস হেড। বড় দলের এই তারকারা বহুদিন ধরেই বিশ্ব ক্রিকেটে টি–টোয়েন্টির বিনোদনের প্রতীক।
কিন্তু ক্রিকেটের বিশাল মহাসাগরে এমন কিছু নামও আছে, যাদের সম্পর্কে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই হয়তো জানেন না, অথচ রেকর্ডের খাতায় তারা শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন। তেমনই দুটি চমকপ্রদ নাম—সৌদি আরবের ফয়সাল খান ও বেলজিয়ামের সাবের জাখিল।
সহযোগী দেশ থেকেও বিশ্ব রেকর্ড
আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে সৌদি আরব ও বেলজিয়াম ক্রিকেট খেললেও, আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টির মর্যাদা পাওয়ায় তাদের খেলোয়াড়দের পরিসংখ্যান এখন বড় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। অনেক সময় তারা দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলেন, ফলে স্ট্রাইক রেট ও গড়ের মতো পরিসংখ্যানে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ঘটে। তবুও ধারাবাহিকভাবে রান করার কৃতিত্ব কোনোভাবেই হালকা করে দেখা যায় না।
ফয়সালের ব্যাটিং তাণ্ডব
ফয়সাল খান সৌদি আরবের ক্রিকেট দলে ওপেনার হিসেবে খেলেন এবং মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের হয়ে সবচেয়ে বড় তারকায় পরিণত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৬১ ম্যাচে তার রান ১,৭৪৩, গড় ৩১.১২ এবং স্ট্রাইক রেট চমকপ্রদ ১৭৩.৪৩। এই সময়ে তিনি করেছেন ১টি সেঞ্চুরি ও ১০টি ফিফটি। বাউন্ডারি সংখ্যা অবিশ্বাস্য—১৮০টি চার ও ১০৬টি ছয়। তার স্ট্রাইক রেট এমনই যে, ১,০০০ রান–এর বেশি করা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি শীর্ষে।
জাখিলও পিছিয়ে নেই
বেলজিয়ামের সাবের জাখিলও সমানভাবে মারমুখী ব্যাটসম্যান। ৫২ ম্যাচে তিনি করেছেন ১,০৫৮ রান, গড় ২৭.৮৪ এবং স্ট্রাইক রেট ১৬৯.২৮। আছে ১ সেঞ্চুরি ও ৩টি ফিফটি। দুইজনেরই ব্যাটিং ধরণ একই—দ্রুত রান তোলা এবং প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
বড় দলের তারকাদের সাথে তুলনা
যদি আমরা ২,০০০ রান–এর বেশি করা ব্যাটসম্যানদের তালিকা দেখি, তাহলে ভারতের সূর্যকুমার যাদব স্ট্রাইক রেটে (১৬৭.০৭) সবার ওপরে। কিন্তু এখানেও ফয়সাল ও জাখিলের মতো সহযোগী দেশের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বড় তারকাদের কাছাকাছি বা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে।
আরও উপরের মানদণ্ডে, অর্থাৎ ৩,০০০ রান–এর বেশি করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শীর্ষে আছেন ইংল্যান্ডের জস বাটলার (স্ট্রাইক রেট ১৪৭.০৫)। তবে সহযোগী দেশের খেলোয়াড়রা যদি ধারাবাহিকভাবে রান করতে থাকেন, ভবিষ্যতে তারাও এই তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেন।
৪,০০০ রান–এর মর্যাদা
বর্তমানে ৪,০০০ রান পেরোনো ক্রিকেটার মাত্র তিনজন—রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও বাবর আজম। এখানেও স্ট্রাইক রেটে রোহিত শীর্ষে (১৪০.৮৯)। ফয়সাল ও জাখিল এখনো অনেক দূরে থাকলেও তাদের স্ট্রাইক রেট এমন যে, নিয়মিত খেলার সুযোগ পেলে একদিন হয়তো তারাও এই অভিজাত তালিকায় প্রবেশ করবেন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইসিসি সহযোগী দেশের ম্যাচগুলোকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার ফলে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এতে ছোট দেশের খেলোয়াড়দের প্রতিভা সবার সামনে আসছে এবং রেকর্ড তালিকায় তারা বড় দেশগুলোর তারকাদেরও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছেন।
সৌদি আরবের ফয়সাল খান ও বেলজিয়ামের সাবের জাখিল—দুজনই প্রমাণ করেছেন, ক্রিকেটে তারকা হওয়ার জন্য শুধু বড় দলে জন্ম নেওয়া জরুরি নয়, দরকার প্রতিভা, পরিশ্রম এবং বড় শট খেলার সাহস।